Uncle Podger from Jerome K. Jerome!- (Bangla) পোজার কাক্কুর কর্মকান্ড!!

শতাব্দীর সেরা রম্য রচনা “Three man in a Boat”-by Jerome k. Jerome এর Podger Uncle part এর বঙ্গানুবাদ। যদিও এর আগে সম্পুর্ন বইটির অনুবাদ হয়েছে, কিন্তু বইটির একজন অনুরাগী হিসেবে ছোট একটি অংশের অনুবাদ করার চেষ্টা করছি। আমি একজন সাধারন নবীন অনুবাদক যেকোন ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।
ধন্যবাদ।

পোজার কাক্কুর কর্মকান্ড
প্রথমেই পোজার কাক্কুর পরিচয়টা তুলে ধরা দরকার, এই বইটির মূল বর্ণনাকারীর (লেখক নিজেই হয়তবা) কাক্কু যে কিনা নিজেকে সর্বকাজের কাজী ভাবে তবে এতদসংক্রান্ত যত সমস্যা ঝামেলা সে অন্যের ঘাড়েই চাপায়। যাই হোক তার কর্মকাণ্ড তার আশেপাশের লোকের জন্য বিপদজ্জনক হলেও তার গল্প বলা ও শোনার মধ্যে একটি থ্রিলিং অনুভুতি রয়েছে। তাই আমরা এখানে তার কর্মকান্ডের উপর আলোকপাত করব।

“পোজার কাক্কুর কর্মকান্ডের শুরু মানেই সারা বাড়িতে একটা উথালপাতাল পরিবেশ সৃষ্টি হয় যা আপনি হয়ত আপনার জীবনে দেখেননি। ঘটনার শুরু এভাবে, ছবির ফ্রেম মেকারের কাছ থেকে হয়ত একটি ছবি আসলো এবং হয়ত সেটা ডাইনিং রুমে দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালে সাটানোর অপেক্ষায়, কাকি হয়ত জিজ্ঞাসা করলেন যে ছবিটার ব্যাপারে কি করা যায় আর ওই মুহুর্তেই কাক্কু সব দায় দায়িত্ব নিয়ে বলে ফেলবে “আরে এটা আমার কাছে ছেড়ে দাও, এটা নিয়ে তোমাদের কারো কোন চিন্তাই করাতে হবে না”। এরপর সে তার গায়ের কোট খুলে রেখেই কাজে নেমে পড়বে।

প্রথমেই সে বাসার একটি মেয়েকে পাঠাবে ৬ পয়সার পেরেক নিয়ে আসার জন্য, তারপরেই আবার আরেকজন ছেলেকে তার কাছে পাঠাবে পেরেকের সাইজ বলে দেয়ার জন্য। এভাবে সে ধীরে ধীরে সারা বাড়ির লোকজনকে এই কাজে জড়িত করে ফেলবে।

সে চিৎকার করে বলবে “উইল, তাড়াতাড়ি যাও আর হাতুড়ি নিয়ে এসো!!”, “টম, আমাকে স্কেল টা এনে দাও!! আর মইটা নিয়ে এসো এবং সাথে একটি চেয়ারও নিয়ে এসো!!” আর “জিম, দ্রুত মিঃ গুগোল এর কাছে যাও এবং বলো “পাপা আপনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ও আশা করছেন যে আপনি সুস্থ আছেন এবং আপনি কি আপনার স্পিরিট লেভেলটা ধাঁর দিবেন কিনা??” আর মারিয়া তুমি কোথাও যেয়ো না, কারন আমি চাই কেউ একজন আমার জন্য বাতিটা ধরে রাখবে। আর যখন ওই মেয়েটি পেরেক নিয়ে ফিরে আসবে, তাকে আবার যেতে হবে সুতা আনার জন্য। আর টম!! টম কোথায়?? টম এদিকে এসো; তুমি ছবিটা আমার হাতে দাও!!

এরপর সে হয়ত ছবিটা হাতে নিবে, ফেলে দিবে ফলে ছবিটা ফ্রেম থেকে বের হয়ে আসবে এবং সে হয়ত ফ্রেমের কাচটাকে বাচাতে যাবে এবং নিজের হাত কেটে ফেলবে, তারপর সারাঘর খুজে বেড়াবে তার রুমাল। কিন্তু সে তার রুমাল খুজে পাবে না, কারন সেটা তার কোটের পকেটে ছিল, এবং সে জানে না যে সে কোথায় তার কোটটা রেখেছিল, ফলে সারা বাড়ির লোক তখন যন্ত্রপাতি খোজা বাদ দিয়ে তার কোট খোজার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, আর সে সারা বাড়িতে দৌড়ে বেড়াবে আর অন্যদেরকে ব্যতিব্যস্ত রাখবে। বলতে থাকবে “সারাবাড়ির কেঊ আমার কোটটা কোথায় জানে না?? আমি আমার সারাজীবনে এমন অবস্থায় পড়িনি!! ছয় জন মানুষ!! তাও আমার কোটটা খুজে পাচ্ছ না, মাত্র ৫ মিনিট আগে আমি সেটা খুলে রাখলাম!!!…।” বলতে বলতে সে হয়ত দাঁড়ালো এমন সময় দেখতে পাবে যে সে আসলে তার কোটটার উপরেই বসে ছিল!!! এরপর সে চিৎকার দিয়ে বলবে “তোমরা খোজা বাদ দিতে পারো!! আমি নিজেই এটা খুজে পেয়েছি! তোমাদের না বলে বাড়ির বিড়ালটাকে বললেও হতো।!!” এরপর তার হাতে ব্যান্ডেজ বাধার জন্য আধা ঘন্টা ব্যয়ের পর নতুন গ্লাস আনা হবে, যন্ত্রপাতি, মই, চেয়ার এবং মোমবাতি আনার পর পুরো পরিবার একত্রে তাকে সাহায্য করার জন্য তার চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়াবে। দুইজন তার চেয়ারটি ধরবে, তৃতীয়জন তাকে ঊঠতে সাহায্য করবে এবং তাকে ধরে রাখবে, চতুর্থজন তার হাতে পেরেক তুলে দিবে, পঞ্চম জন তাকে হাতুড়ী তুলে দিবে এই অবস্থায় সে পেরেক হাতে নিয়েই সেটা হাত ফসকে নিচে পড়ে যাবে! সে একটা হতাশ কন্ঠে বলে উঠবে “আরে!! এখন আবার পেরেকটা গেলো!!” ফলে সবাই হামাগুড়ি দিয়ে পেরেক খোজায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে, আর সে চেয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে গড়গড় করতে থাকবে আর তাকে সারা সন্ধ্যা এভাবে দাঁড় করে রাখবে কিনা তা জানতে চাইবে। এরপর হয়ত পেরেকটা পাওয়া যাবে, কিন্তু তখন আবার সে হাতুড়ী হারিয়ে ফেলবে। “হাতুড়ী কোথায়?? হাতুরীটাকে কি করলাম আমি?? ওরে খোদা!! সাঁতটা মানুষ এখানে ঘুরঘুর করছো আর জানোনা আমি হাতুড়ীটাকে কি করলাম??”

এরপর হাতুরীটা খজে পাওয়া গেলে তখন আবার পেরেক মারার জন্য চিহ্নিত স্থানটা খুজে পাবে না। বাড়ির প্রত্যেকে চেয়ারের উপরে ঊঠে তার পাশাপাশি খুজতে থাকবে এবং প্রত্যকেই আলাদা আলাদা চিহ্ন খুজে বের করেবে। সে প্রত্যেককেই বোকা বলবে এবং চেয়ার থেকে নেমে যেতে বলবে। তারপর সে নিজেই একটি স্কেল নিয়ে মাপা শুরু করবে, এবং সে মেপে বের করবে যে সে কর্নার থেকে সাড়ে একত্রিশ এবং আটত্রিশ ইঞ্চি দূরের পয়েন্টে পেরেক মারবে, কিন্তু সে এই কাজটা আন্দাজে করার চেষ্টা করবে পরে না পেরে পাগল হয়ে যাবে। বাড়ির সবাই একিই কাজ করে প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্ট নির্বাচন করবে আর একে অপরের সাথে তর্ক করবে। এই গন্ডগোলের ভিতরে আসল সংখ্যাটি সবাই ভুলে যাবে এবং পোজার কাক্কুকে আবার সেটা মাপতে হবে।
এবার সে একটি সুতা ব্যবহার করবে, আর এই সময়ে সে তার চেয়ারটি নিয়ে পয়তাল্লিশ ডিগ্রী কোনে হেলে তার হাতের নাগালের চেয়েও ৩ ইঞ্চি দূরের একটি পয়েন্ট চিহ্নিত করার চেষ্টা করবে, ফলাফল সরূপ সে সুতাসমেত পিছলে এমনভাবে পিয়ানোর উপরে পরে যে তার ফলে এক অদ্ভুত ধরনের সুন্দর একটা সুরের মূর্ছনা তৈরী হয় যা কিনা তার মাথা ও শরীর একই সময়ে পিয়ানোর সবগুলো নোটে আঘাতের প্রত্যক্ষ ফলাফল। শেষমেশ কাক্কু পেরেক ঠুকার স্থান চিহ্নিত করতে সক্ষম হন, এরপর একটা পেরেক বামহাতে নিয়ে ডানহাতে হাতুড়ী নিয়ে প্রথম আঘাত করতেই দেখা গেল যে সেটা পেরেকে না লেগে লেগেছে কাক্কুর বামহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে!! এর মধ্যেই চিৎকার করতে করতে হাতুড়ীটা ছেড়ে দিলে সেটা আবার পড়বে কারো পায়ে!!! এঅবস্থায় কাকী ঘটনা গুলো ভালোভাবে দেখতে থাকবে, আর যখনই কাক্কু দ্বিতীয়বার পেরেক ঠুকার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে তখনই বলে উঠবেন যে কাক্কুর আসলে কাকী কে আগেই জানানো উচিৎ ছিল তাহলে তিনি ১ সপ্তাহের জন্য বাপের বাড়ি চলে যেতেন!! তা শুনে কাক্কু বলবেন “আরে মহিলা তুমি সব বিষয়েই একটু বেশী আওয়াজ কর!!” “কেন যে আমি এইসব ছোটখাট কাজগুলো করতে যাই!!”

এরপর আরেকবার চেষ্টা করবেন, এইবার হাতুড়ীর আঘাতে পেরেকটা হাতুড়ীর অর্ধেকসমেত দেয়ালের প্লাস্টার ভেদ করে ঢুকে গেল, সাথে কাক্কু এতজোরে গিয়ে দেয়ালের উপর পড়ল যে তাতে তার নাক থেতলে যাওয়ার উপক্রম!!
এরপর আমাদের আবার রুলার ও সুতা খুজতে হবে এবং মধ্যরাত নাগাদ হয়ত একটা নতুন ছিদ্র তৈরী সম্পন্ন হবে, এবং ছবিটা টাঙ্গানো হবে কিন্তু খুবই অদ্ভুত ও দুর্বলভাবে !! আর দেয়ালটা মনেহবে যেন ক্ষেতের মত মই দেয়া হয়েছে। আর কাক্কু বাদে ঘরের সবাই এতো ক্লান্ত শ্রান্ত যে কারো নড়াচড়া করার শক্তি টুকু নেই।
সে গর্বের সাথে চেয়ারের উপর থেকে লাফিয়ে নেমে তার তৈরী করা ধ্বংসজজ্ঞের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে “কেন যে লোকজন এইসব ছোটখাট কাজের জন্য লোক নেয়??”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *